লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুরে ‘জ্বিনের’ মসজিদ। ‘অসংখ্য জ্বিন রাতের আঁধারে মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন বলেই হয়তো এ ধরনের নামকরণ করা হয়েছে। জনশ্রুতি আছে অসংখ্য জ্বিনি এক রাতে এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। এরপর কয়েক বছর তারা এ মসজিদে ইবাদত করেছেন বলে শোনা যায়।
স্থানীয় মুরব্বিরা জানায়, গভীর রাতে জ্বিনদের জিকিরের আওয়াজ ভেসে আসতো। আবার এটাও শোনা যায় মসজিদটি তৈরিতে টাকার যোগান দিয়েছে জ্বিন। এসব কথিত জনশ্রুতির কারণে ১২৮ বছর আগের নান্দনিক স্থাপনার ‘মসজিদ-ই-জামে আবদুল্লাহ’ বর্তমানে জ্বিনের মসজিদ নামেই পরিচিতি।
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর শহরের দেনায়েতপুর এলাকায় মসজিদটি ১৮৮৮ সালে ৫৭ শতাংশ জমির উপর নির্মিত হয়। ১১০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৭০ ফুট প্রস্থের এ মসজিদে রয়েছে ৩টি গম্বুজ ৪টি মিনার রয়েছে। ইটের তৈরি আদি এ স্থাপনায় মিনার, গম্বুজ ও মূল ভবন নকশায় রয়েছে শতভাগ মুন্সিয়ানা। স্থাপনার নান্দনিকতায় হৃদয় ছুঁয়ে যাবে যে কারোরই। মসজিদের তলদেশে ২০ থেকে ২৫ ফুট নিচে রয়েছে একটি গোপন ইবাদতখানা। কয়েক যুগ ধরে ওই ইবাদত খানায় জমে থাকা বুক পরিমাণ পানির কূপ দেখলে আবারো জ্বিনের গল্প নিয়ে বাড়বে কৌতুহল।
মসজিদের ভিটির উচ্চতা প্রায় ১৫ ফুট। ১৩ ধাপ সিঁড়ি ডিঙিয়ে মসজিদে প্রবেশ করতে হয়। দেয়ালের প্রস্থ ৮ ফুট। সম্মুখের মিনারের উচ্চতা ২৫ ফুট। মসজিদের সামনে রয়েছে বিশাল পুকুর। পুকুরের সাথেই রয়েছেন আজান দেয়ার ২০ ফুট উচ্চতার একটি মিম্বার। এর উপরে উঠেই মোয়াজিন বা ইমান আযান দিতেন।
মসজিদের ২০ থেকে ২৫ ফুট তলদেশে থাকা পাকা গোপন ইবাদতখানায় প্রতিষ্ঠাতা মৌলভী আবদুল্লাহ সাহেব আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। তার মৃত্যুর ক’বছর পর ওই কক্ষ পানিভর্তি কূপে পরিণত হয়। এ কূপে ঢুকতে মসজিদের দক্ষিণ পাশে রয়েছে পাকা সিঁড়ি। বার মাস এ কূপে কম বেশি পানি থাকা নিয়ে দর্শনার্থীদের কৌতুহল বেশি। দর্শনার্থীদের কেউ কেউ রোগ শোক থেকে মুক্তি পেতে ওই পানি নিয়ত মানত করে পান করে থাকেন।
কথিত আছে, মসজিদ তৈরিতে জ্বিন নিয়ে এমন গল্পের সত্য মিথ্যা আর যাই থাকুক প্রতিদিন প্রাচীন দৃষ্টিনন্দন এ স্থাপনা দেখতে দর্শনার্থীরা আসেন মসজিদ প্রাঙ্গণে। আগতদের অনেকেই বিভিন্ন নিয়ত ও মানত করে এ মসজিদ দেখতে আসেন। অনেকেই মনের বাসনা পূর্ণ করতে মসজিদে আদায় করেন নামাজ।
১৮২৮ সালে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মাওলানা আবদুল্লাহ। তিনি ভারতের দারুল উলূম দেওবন্দ মাদরাসায় দীর্ঘ ১৭ বছর পড়াশুনা করেন। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ওই ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে তিনি উচ্চতর দ্বিনি শিক্ষালাভ করে দেশে ফিরে এসে নিজ এলাকায় মসজিদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি ভারতের দিল্লীর শাহী জামে মসজিদের হুবহু নমুনায় ১৮৮৮ সালে এ মসজিদ ও মসজিদের পাশে প্রতিষ্ঠা করেন একটি কওমি মাদরাসা ও মুসাফিরখানা।
মসজিদের স্থাপনার এক তৃতীয়াংশ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার পর তার মৃত্যু হলে পরবর্তীতে তার ছেলে মাওলানা মাহমুদ উল্যা মসজিদের অসমাপ্ত কাজ শেষ করেন। বর্তমানে মাদরাসাটি চালু থাকলেও মুসাফিরখানা বন্ধ রয়েছে। মসজিদটি জ্বিনের মসজিদ হিসেবে পরিচিত থাকলেও এটি মূলত মাওলানা আবদুল্লাহ নির্মাণ করেছেন এবং জনশ্রুতিগুলোর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই বলে জানিয়েছেন আবদুল্লাহ সাহেবের নাতি শফিক উল্যা মাহমুদী।
মসজিদ দেখতে আসা ঢাকা খিলক্ষেতের বাসিন্দা ফরহাদ ও ইকবাল হোসেন জানান, তিনি ছোটবেলা থেকে তার বাবা মায়ের কাছে এ জ্বিনের মসজিদের কথা শুনে আসছেন। কারুকাজেমণ্ডিত এ সুন্দর স্থাপনা দেখে তিনি মুগ্ধ ও বিস্মিত।
মসজিদের ইমাম লুৎফর রহমান আবু বকর জানান, মসজিদে ৬টি লাইনে ৮০ থেকে ৮৫ জন করে ৫ শতাধিক মুসল্লি শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করেন। এতে এলাকার ও দূর দূরান্তের মুসল্লিরা অংশ নেন।
মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাজী আবদুল খালেক জানান, প্রাচীন ও নান্দনিক এ স্থাপনাটি জেলার উল্ল্যেখযোগ্য প্রধান স্থাপনাগুলোর মধ্যে একটি। সরকারিভাবে অনুদান না পাওয়ায় জেলার ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদ সংস্কার করা যাচ্ছে না। সংস্কারের অভাবে ১২৮ বছরের আগের এ স্থাপনা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে একটি মিনারও নষ্ট হয়ে গেছে।
যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আলম বলেন, ‘মসজিদটি ব্যক্তি মালিকরা নির্মাণ করে থাকলেও অনেক আগ থেকেই জ্বিনের মসজিদ হিসেবে পরিচিত হয়ে আসছে। মসজিদটি সংস্কারের জন্য উপজেলা প্রশাসন অনেক সময় অনেক অনুদান দিয়ে থাকে। অনেক বছরের পুরাতন মসজিদ হওয়ায় ওই অর্থ দিয়ে বড় ধরনের সংস্কার করা সম্ভব হয় না।
Jin Mosque |
স্থানীয় মুরব্বিরা জানায়, গভীর রাতে জ্বিনদের জিকিরের আওয়াজ ভেসে আসতো। আবার এটাও শোনা যায় মসজিদটি তৈরিতে টাকার যোগান দিয়েছে জ্বিন। এসব কথিত জনশ্রুতির কারণে ১২৮ বছর আগের নান্দনিক স্থাপনার ‘মসজিদ-ই-জামে আবদুল্লাহ’ বর্তমানে জ্বিনের মসজিদ নামেই পরিচিতি।
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর শহরের দেনায়েতপুর এলাকায় মসজিদটি ১৮৮৮ সালে ৫৭ শতাংশ জমির উপর নির্মিত হয়। ১১০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৭০ ফুট প্রস্থের এ মসজিদে রয়েছে ৩টি গম্বুজ ৪টি মিনার রয়েছে। ইটের তৈরি আদি এ স্থাপনায় মিনার, গম্বুজ ও মূল ভবন নকশায় রয়েছে শতভাগ মুন্সিয়ানা। স্থাপনার নান্দনিকতায় হৃদয় ছুঁয়ে যাবে যে কারোরই। মসজিদের তলদেশে ২০ থেকে ২৫ ফুট নিচে রয়েছে একটি গোপন ইবাদতখানা। কয়েক যুগ ধরে ওই ইবাদত খানায় জমে থাকা বুক পরিমাণ পানির কূপ দেখলে আবারো জ্বিনের গল্প নিয়ে বাড়বে কৌতুহল।
মসজিদের ভিটির উচ্চতা প্রায় ১৫ ফুট। ১৩ ধাপ সিঁড়ি ডিঙিয়ে মসজিদে প্রবেশ করতে হয়। দেয়ালের প্রস্থ ৮ ফুট। সম্মুখের মিনারের উচ্চতা ২৫ ফুট। মসজিদের সামনে রয়েছে বিশাল পুকুর। পুকুরের সাথেই রয়েছেন আজান দেয়ার ২০ ফুট উচ্চতার একটি মিম্বার। এর উপরে উঠেই মোয়াজিন বা ইমান আযান দিতেন।
মসজিদের ২০ থেকে ২৫ ফুট তলদেশে থাকা পাকা গোপন ইবাদতখানায় প্রতিষ্ঠাতা মৌলভী আবদুল্লাহ সাহেব আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। তার মৃত্যুর ক’বছর পর ওই কক্ষ পানিভর্তি কূপে পরিণত হয়। এ কূপে ঢুকতে মসজিদের দক্ষিণ পাশে রয়েছে পাকা সিঁড়ি। বার মাস এ কূপে কম বেশি পানি থাকা নিয়ে দর্শনার্থীদের কৌতুহল বেশি। দর্শনার্থীদের কেউ কেউ রোগ শোক থেকে মুক্তি পেতে ওই পানি নিয়ত মানত করে পান করে থাকেন।
কথিত আছে, মসজিদ তৈরিতে জ্বিন নিয়ে এমন গল্পের সত্য মিথ্যা আর যাই থাকুক প্রতিদিন প্রাচীন দৃষ্টিনন্দন এ স্থাপনা দেখতে দর্শনার্থীরা আসেন মসজিদ প্রাঙ্গণে। আগতদের অনেকেই বিভিন্ন নিয়ত ও মানত করে এ মসজিদ দেখতে আসেন। অনেকেই মনের বাসনা পূর্ণ করতে মসজিদে আদায় করেন নামাজ।
১৮২৮ সালে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মাওলানা আবদুল্লাহ। তিনি ভারতের দারুল উলূম দেওবন্দ মাদরাসায় দীর্ঘ ১৭ বছর পড়াশুনা করেন। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ওই ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে তিনি উচ্চতর দ্বিনি শিক্ষালাভ করে দেশে ফিরে এসে নিজ এলাকায় মসজিদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি ভারতের দিল্লীর শাহী জামে মসজিদের হুবহু নমুনায় ১৮৮৮ সালে এ মসজিদ ও মসজিদের পাশে প্রতিষ্ঠা করেন একটি কওমি মাদরাসা ও মুসাফিরখানা।
মসজিদের স্থাপনার এক তৃতীয়াংশ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার পর তার মৃত্যু হলে পরবর্তীতে তার ছেলে মাওলানা মাহমুদ উল্যা মসজিদের অসমাপ্ত কাজ শেষ করেন। বর্তমানে মাদরাসাটি চালু থাকলেও মুসাফিরখানা বন্ধ রয়েছে। মসজিদটি জ্বিনের মসজিদ হিসেবে পরিচিত থাকলেও এটি মূলত মাওলানা আবদুল্লাহ নির্মাণ করেছেন এবং জনশ্রুতিগুলোর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই বলে জানিয়েছেন আবদুল্লাহ সাহেবের নাতি শফিক উল্যা মাহমুদী।
মসজিদ দেখতে আসা ঢাকা খিলক্ষেতের বাসিন্দা ফরহাদ ও ইকবাল হোসেন জানান, তিনি ছোটবেলা থেকে তার বাবা মায়ের কাছে এ জ্বিনের মসজিদের কথা শুনে আসছেন। কারুকাজেমণ্ডিত এ সুন্দর স্থাপনা দেখে তিনি মুগ্ধ ও বিস্মিত।
মসজিদের ইমাম লুৎফর রহমান আবু বকর জানান, মসজিদে ৬টি লাইনে ৮০ থেকে ৮৫ জন করে ৫ শতাধিক মুসল্লি শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করেন। এতে এলাকার ও দূর দূরান্তের মুসল্লিরা অংশ নেন।
মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাজী আবদুল খালেক জানান, প্রাচীন ও নান্দনিক এ স্থাপনাটি জেলার উল্ল্যেখযোগ্য প্রধান স্থাপনাগুলোর মধ্যে একটি। সরকারিভাবে অনুদান না পাওয়ায় জেলার ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদ সংস্কার করা যাচ্ছে না। সংস্কারের অভাবে ১২৮ বছরের আগের এ স্থাপনা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে একটি মিনারও নষ্ট হয়ে গেছে।
যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আলম বলেন, ‘মসজিদটি ব্যক্তি মালিকরা নির্মাণ করে থাকলেও অনেক আগ থেকেই জ্বিনের মসজিদ হিসেবে পরিচিত হয়ে আসছে। মসজিদটি সংস্কারের জন্য উপজেলা প্রশাসন অনেক সময় অনেক অনুদান দিয়ে থাকে। অনেক বছরের পুরাতন মসজিদ হওয়ায় ওই অর্থ দিয়ে বড় ধরনের সংস্কার করা সম্ভব হয় না।
0 comments:
Post a Comment